• রাত ১২:২১ মিনিট শুক্রবার
  • ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ঋতু : গ্রীষ্মকাল
  • ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
এই মাত্র পাওয়া খবর :
সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ সোনারগাঁও পৌরসভায় কালামের কেন্দ্র কমিটির সভা সোনারগাঁয়ে বিশ বছর পর বাকপ্রতিবন্ধী ভাইকে ফিরে পেলেন তার বড় ভাই মাহফুজুর রহমান কালামকে বিজয়ী করেতে জামপুরে আলোচনা সভা সোনারগাঁয়ে প্রার্থীতা ফিরে পেলেন ৫ প্রার্থী সোনারগাঁয়ে ভবন ঘেঁষে মাটি খনন, ভেঙ্গে পড়লো পাশের স্থাপনা কালাম একমাত্র যোগ্য প্রার্থী, উপজেলা নির্বাচনে তাকে ভোট দিন: ডা. বিরু সোনারগাঁয়ে সার্বজনীন পেনশন মেলা ও স্পট রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম উদ্ধোধন বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বউয়ের মামলা সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ, ৪ জন বাতিল সোনারগাঁয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যুবককে অপহরন করে নির্যাতনের অভিযোগ সানাউল্লাহকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ১৫ মামলার আসামী গ্রেপ্তার বন্দরে ইউএনও অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের আত্মহত্যা সোনারগাঁয়ে ২দিন ধরে মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ সোনারগাঁয়ে দুই ব্যাক্তি আটক, ৪৯ লাখ জাল টাকা উদ্ধার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আজিজুল ইসলাম মুকুল সোনারগাঁয়ে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল তাপদাহের প্রভাব পড়েছে সোনারগাঁয়ের বাজার ও মার্কেটগুলোতে মাহফুজুর রহমান কালামের নির্বাচনী প্রচারনায় নেতাকর্মীর ঢল সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগ
সেলিম ওসমানের এবার নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া অনেকটাই দোদুল্যমান

সেলিম ওসমানের এবার নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া অনেকটাই দোদুল্যমান

Logo


শেখ আরিফ, নারায়ণগঞ্জ-বন্দর: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি সদর ও বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি এলাকাকে নিয়ে গঠিত হওয়ায় দেশ গঠনের সূচনা লগ্ন থেকেই নারায়ণগঞ্জসহ কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও এই আসনটির গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া এই দুটি এলাকাকে ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের গোড়াপত্তন এবং শিল্প ও বাণিজ্যের খ্যাতি আছে বিশ্ব জুড়ে। অন্যদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমল থেকেই এই এলাকাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলার দুটি স্বনামধন্য ও প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দীতার সূত্রপাত শুরু হয়। যা বংশ পরম্পরায় এখনও বিদ্যমান আছে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র দেশবাসী। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সিংহভাগ সময়ই এই আসনটি আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের সমর্থিত দলের নেতৃত্বে চলে আসছে। ১৯৮৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় ধরেই এই আসনটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। অনেকটা তারই ধারাবাহিকতায় এই আসনের বর্তমান এমপি হিসেবে আছেন একেএম সেলিম ওসমান। তবে এই আসন থেকে সেলিম ওসমানের এবার নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া অনেকটাই দোদুল্যমান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এর আগে ২০১৪ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর এই আসনে জাতীয় পার্টির সমর্থনে এবং আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত হন একেএম সেলিম ওসমান। সেই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে অনেকটা ক্ষোভে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে লড়ে পরাজিত হন এসএম আকরাম। এরপর নাগরিক ঐক্যে যোগদান করেন তিনি।

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নাগরিক ঐক্যের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন তিনি। সে সময় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পেলেও তৎকালীন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও তার সমর্থকদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় এসএম আকরাম পরাজিত হন বলে অভিযোগ আসে। আতাউর রহমান মুকুল সেলিম ওসমানের ঘোর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সেসব কর্মকান্ডের জন্য এখন তিনি বিএনপি থেকে বঞ্চিত বলেও মনে করেন স্থানীয় বিএনপি।

তাছাড়া সেই নির্বাচনে সেলিম ওসমান তার পরিবার এবং নিজ দলীয় নেতা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানের প্রার্থী হওয়ার বাসনা নিয়ে বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেন সেলিম ওসমান। তবে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন তিনি। তবে বন্দর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে এবার লাঙ্গলকে বর্জন করে নৌকাকে সমর্থন দেওয়ার দাবি জানালে আওয়ামী লীগের একটি বৃহত্তর অংশই এবার লাঙ্গল নয় নৌকাকে বিজয়ী করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এরই মধ্যে সেলিম ওসমানকে তার শিষ্যদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে ঘোষণা করার প্রচেষ্টাও চালানো হয়। যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান নিজে সেখানে উপস্থিত হয়ে এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের সেই চেষ্টা ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন বন্দর আওয়ামী লীগ।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানকে নির্বাচিত করতে বন্দরে গণসংবর্ধনার আয়োজন করে ওসমান পরিবার ও তাদের শিষ্য হিসেবে পরিচিত বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানের সহযোগিতায়। সেখানে বন্দর আওয়ামী লীগের নেতাদের একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বুঝতে পারে এখানে তাদের কাছ থেকে ওয়াদা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন তারা সেখান থেকে সটকে পড়ে এবং সেই আয়োজন ও প্রচেষ্টা ফ্লপ করে।

এমএ রশিদের ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে জাতীয় পার্টির লেজুরবৃত্তি করার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এই লেজুরবৃত্তির মাধ্যমেই ইউপি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা যার নাই সেই এমএ রশিদ এখন বড় বড় পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

কিছুদিন আগে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের কথায়ও বিষয়টি ওঠে আসে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমএ রশিদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা এখন অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলেও দাবি তাদের। বিষয়টি স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলেই জানা যাবে বলে মনে করেন তারা। কিছুদিন আগেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করার বাসনায় ব্যানার টানিয়ে তোপের মুখে পড়ে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলেন এমএ রশিদ। যদিও পরে তিনি চক্রান্তের শিকার বলে কিছু পোষা লোকদের দিয়ে প্রচারণার চেষ্টা চালিয়ে যান।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, যেহেতু এবার জাতীয় পার্টি আলাদা ৩০০টি আসনে প্রার্থী দিবে এবং এখানকার আওয়ামী লীগের দাবী হিসেবে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে তাই সেলিম ওসমানের ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সেই সুযোগ আর হবে না বলে মনে করেন তারা। এমনকি গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর বিপক্ষে সরাসরি কাজ করেছেন সেলিম ওসমানের ভক্তরা। তাই এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ হতে আভ্যন্তরীণ কোন ভোগান্তি না থাকলেও এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সেলিম ওসমান তার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়ে কতটা আশাবাদী তা নিয়েই এখন প্রশ্ন খোদ জাতীয় পার্টি থেকে। যার জন্য ওসমান পরিবার তাদের শাগরেদদের সমর্থন নিয়ে সেলিম ওসমানকে নৌকা প্রতিক দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেষ্টাও চালানো হয় বলে জানায় একাধিক সূত্র। যার আঁচ করতে পেরে এর আগে সিটি মেয়র আইভীও সেলিম ওসমানকে সরাসরি নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করার আহ্বান জানান। এরমধ্যে নতুন করে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দাঁড়িয়েছে আজমেরী ওসমানের উত্থান। অর্থাৎ বিএনপির ডাকা হরতাল ডাকার প্রতিবাদ জানিয়ে আজমেরী ওসমান তার সমর্থকদের নিয়ে মাঠে থাকায় অনেকটাই অসন্তুষ্ট ওসমান পরিবার। কিছুদিন আগে শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি এবার জোটবদ্ধ নির্বাচন করছে না। যা জাতীয় পর্যায়ে জাপার মধ্যে ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা পেলেও সেলিম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির জন্য তা অভিশাপ হিসেবেই মনে করছেন সেলিম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল তাদের এতদিনে মনের ক্ষোভ ব্যালটের মাধ্যমে প্রকাশের সুযোগ নষ্ট করবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের সকল নির্যাতিত ও ভূক্তভোগী নেতা-কর্মী ও সমর্থকগণ। এতদিন তারা ওসমান পরিবারের শিষ্য হিসেবে পরিচিত এমএ রশিদ ও তার পোষাদের হুমকি ধমকির ভয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলেও এবারের সুযোগ হাত ছাড়া করতে চান না তারা। যা শুধু জাতীয় পার্টিই না, জাতীয় পার্টির লেজুরবৃত্তি করা আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্যও বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাছাড়া বোনাস টেনশন হিসেবে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুদৃষ্টিতে থাকা নতুন দল তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন নিয়ে লুকোচুরির খেলা। গত সিটি নির্বাচনেও তৈমূর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভীকে বেশ ভোগান্তি দিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি অংশ। যদি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে সত্যিই তৈমূর প্রতিদ্বন্দীতা করেন তাহলে সেলিম ওসমানকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে সাথে তিনিও ভোগান্তি দিবেন বলে মনে করেন তারা।


Logo

Website Design & Developed By MD Fahim Haque - Web Solution